বিএনপি সুযোগ পেলে লাখ লাখ মানুষকে মেরে ফেলবে
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সুযোগ পেলে লাখ লাখ মানুষকে মেরে ফেলবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
আজ বুধবার প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে সম্প্রীতি বাংলাদেশ আয়োজিত ‘ বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। সম্প্রীতি বাংলাদেশ এর আহবায়ক পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জাতীয় প্রেসক্লাবের নব নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক সিনিয়র সাংবাদিক শ্যামল দত্ত। এছাড়াও বক্তব্য প্রদান করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নবিনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা, সম্প্রীতি বাংলাদেশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহবায়ক অধ্যাপক ড. বিমান বড়ুয়া।
স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস শিরোনামের অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সম্প্রীতি বাংলাদেশ এর কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও কেন্দ্রীয় পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার। ১৯৭২ সনের ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভার করে সম্প্রীতি বাংলাদেশ।
শ. ম রেজাউল করিম বলেন, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসি হওয়ার পরেও বিএনপি অফিসিয়াল রেকর্ড থেকে তাকে সাসপেণ্ড করেনি। তারা এখনো সুযোগের অপেক্ষায় আছে। যদি সুযোগ পায় বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষকে একদিনে মেরে ফেলবে। দেশকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিনত করবে। মুক্তিযুদ্ধে যারা অংশ নিয়েছেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যারা বিশ্বাস করেন তাদের অপরাধী হিসেব চিহ্নিত করবে। তাদের জেলে পাঠাবে। মৃত্যুদণ্ড দিবে। যারা এখন রাজাকারদের বিচার কাজ করেছে তাদেরকেই নতুন করে তারা ফাঁসিকাষ্ঠে ঝোলাবে।
শ ম রেজাউল করিম বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন বিপ্লবী, জাতীয়তাবাদী, ক্ষণজন্মা নেতা। বিপ্লবের ধারাবাহিকতা শুরু হয়েচিল ছাত্র জীবন থেকে। যে বাংলাদেশ আমরা পেয়েছি সেই বাংলাদেশের রুপকার ছিলেন বঙ্গবন্ধু। তিনি যদি ১০ জানুয়ারি ফিরে না আসতেন তাহলে আমাদের বিজয় অসম্পূর্ণ থাকতো। বঙ্গবন্ধু বিনাশ হয় না, কোন একজন খ্যাতিমানের হত্যার মধ্যে দিয়ে সবকিছু বিনাশ করা যায় না। বঙ্গবন্ধু একটি বিশ্বাস, দর্শন, আর্দশ, পথচালার পাথেয় ও অবিনাশী সত্তা। বিশ্বের নির্যাতিত, নিষ্পেষিত, নিপীড়িত মানুষরা যখনই পথ হারাবে, পথ খুঁজতে হলে বঙ্গবন্ধু জীবনালেখ্য, তার সংগ্রামী জীবন থেকে অনুপ্রেরণা খুজে পাওয়া যেতে পারে।
বঙ্গবন্ধুকে বিপ্লবী ও জাতীয়তাবাদী নেতা হিসেবে উল্লেখ করে বর্তমান সময়ে বঙ্গবন্ধুর প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে শ. ম রেজাউল করিম বলেন, প্রতিক্রিয়াশীলরা যে যে দলের সাথেই যুক্ত থাকুন না কেন, নির্বাচনে নৌকাকে ঠেকিয়ে রাখার জন্য স্বাধীনতা বিরোধীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে যায়। পৃথিবীর ইতিহাসে কোথাও স্বাধীনতা বিরোধীরা সে দেশে রাজনীতির অধিকার না পেলেও ৭৫ পরবর্তী সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশে স্বাধীনতা বিরোধীরা পূনর্বাসিত হয়েছে।
প্রাণিসম্পদমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ নির্মাণে তার কন্যা শেখ হাসিনা দুরত্ব গতিতে কাজ করে চলছেন। সাম্প্রদায়িকতাকে রুখে দাড়ানো, উন্নয়নকে অভীষ্ঠ লক্ষ্যে নিয়ে যাওয়া, সংবিধানের ১৫ অনুচ্ছেদ জনগনের মৌলিক অধিকার ও সকল সম্পদের মালিক হবে জনগণ- অধিকার জনগণকে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য কাজ করছেন প্রধানমন্ত্রী।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ক্ষেত্রে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়তার কথা তুলে ধরেন শ.ম. রেজাউল করিম।
আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই অপরিহার্য। খালেদা জিয়া তারেক রহমানসহ বিএনপিও জিয়া হত্যার বিচার কেন করে নাই সে প্রশ্নও তুলে ধরেন তিনি। ১৯৭১ সালে যে দেশ বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধীতা করেছিল, তারা এখোনো ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে।
সারাদেশে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে আছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, কয়েকজন রাজাকার, স্বাধীনতা বিরোধীদের ফাঁসি দিয়ে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে বিনাশ করতে পারনি। সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্তরসুরীরা বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে- রাজনীতি, প্রশাসন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাহিনীতে- সব জায়গায় ছদ্মবেশে এখনো আছে। কেউ কেউ নব্য আওয়ামীলীগার হয়েছে, কেউ কেউ আমাদের চেয়ে বেশি জয় বাংলা স্লোগান দেন। কিন্তু মৌলিক চরিত্র তাদের ভেতরে সুপ্ত আছে। সময় হলে তারা সেই চরিত্র নিয়ে আবার হাজির হতে পারে। তাই ১০ জানুয়ারিকে উদযাপন করা সময় মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির ঐক্য দরকার।
শ্যামল দত্ত বলেন, ১০ জানুয়ারি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব দেশে না ফিরলে কি হতো! তাকে ২৬ মার্চ গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানের কারাগারে রাখা হলো। তার বিরুদ্ধে সাতটি অভিযোগের মধ্যে তিনটিই ফাঁসি দেয়ার মতো। কিন্ত জাতির জনককে বাঁচিয়ে রাখা হলো। এক্ষেত্রে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্ধিরা গান্ধীর অবদান রয়েছে। এসব নিয়ে অনেক গবেষণা আছে।
তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে তার ভাষণে দুইবার বলেছিলেন, যড়যন্ত্র এখনো শেষ হয়নি। আমাদের রাষ্ট্র ব্যবস্থা কি হবে সেটাও তিনি মাত্র সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন। কত রক্ত ও আত্মহুতির বিনিময়ে এই দেশের জন্ম হয়েছে, তা নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে। কারণ আমাদের মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী ও গণহত্যার সমর্থকেরা সক্রিয়। তাদের ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে।
জিনাত হুদা বলেন, ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীনের দিন বিষন্ন ছিলো। কারন তখনও এই স্বাধীন সার্ভভৌম বাংলাদেশে রুপকার বঙ্গবন্ধু এসে পৌছাননি। ১০ জানুয়ারি তিনি আসার মাধ্যমে দেশকে পূর্ণতাদান করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু ফেরার মাধ্যমে জনগণ জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজততন্ত্র ও অসম্প্রদায়িকতার জন্য লড়াই শুরু করে।
বিমান চন্দ্র বড়ুয়া বলেন, বঙ্গবন্ধু বীরত্বপূর্ণ নেতৃত্বে এদেশের সব ধর্ম ও বর্ণের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। তিনি ইতিহাসের অমর স্বাক্ষী হয়ে মুক্তিকামী মানুষের হৃদয়ে আজীবন বেঁচে থাকবেন। তার নীতি আদর্শ ও নেতৃত্ব প্রজন্ম থেতে প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ, অনুপ্রাণিত ও উৎসাহিত করবে।
সম্প্রীতি বাংলাদেশ এর আহবায়ক পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন এর যে ইতিহাস আমরা জানি তার বাইরেও অনেক তথ্য ও ইতিহাস আছে। সেসব তথ্য ইতিহাসবিদ ও গবেষকরা তুলে আনবেন বলে প্রত্যাশা করেন।
ভারতীয় মিত্র বাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় উল্লেখ করেন, ১৯৭২ সালের যুদ্ধে পশ্চিম সীমান্তে পাকিস্তানের ৫০০০ বর্গ কিলোমিটার ভূমি ভারত ছেড়ে দিতে রাজি হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দেয়ার শর্তে। মুক্তিযুদ্ধের চতেনার অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে হলে আমাদের বারবার ১০ জানুয়ারি কথা বারবার বলতে হবে এবং বঙ্গবন্ধুর কাছেই আসতে হবে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের অর্জিত বিজয় পরিপূর্ণতা পেয়েছিল বলে বক্তাগন উল্লেখ করেন।