সহযোগিতা জোরদারে ঢাকা ও টোকিও’র মধ্যে ৮টি চুক্তি স্বাক্ষরিত
জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার আমন্ত্রণে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপানে চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরের দ্বিতীয় দিনে ঢাকা ও টোকিও আজ আটটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
কৃষি, মেট্রোরেল, শিল্প উন্নয়ন, জাহাজ রিসাইক্লিং, শুল্ক সংক্রান্ত বিষয়, মেধাসম্পদ, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, আইসিটি এবং সাইবার নিরাপত্তা সহযোগিতা বিষয়ে দুই বন্ধুপ্রতীম দেশের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
পরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে উভয় দেশের প্রধানমন্ত্রীদের উপস্থিতিতে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে চুক্তিগুলো বিনিময় করা হয়।
প্রথম চুক্তিটি হলো- বাংলাদেশের কৃষি মন্ত্রণালয় এবং জাপানের কৃষি, বন ও মৎস্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে কৃষি গবেষণা ও উন্নয়ন এবং সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য কৃষি সহযোগিতার বিষয়ে একটি সহযোগিতা স্মারক (এমওসি)।
দ্বিতীয় চুক্তিটি হলো- শুল্ক আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে শুল্ক বিষয়ক সহযোগিতা ও পারস্পরিক সহায়তা সংক্রান্ত জাপান সরকার এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে একটি চুক্তি। এর লক্ষ্য শুল্ক অপরাধ প্রতিরোধ, তদন্ত এবং শুল্ক পদ্ধতির সরলীকরণ ও সমন্বয়ের জন্য সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টা গ্রহণ করা।
তৃতীয় চুক্তিটি হলো- বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং জাপানের অর্থনীতি, বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের মধ্যে ‘বাংলাদেশ-জাপান ইন্ডাস্ট্রিয়াল আপগ্রেডিং পার্টনারশিপ কোঅপারেশনের ওপর একটি ফ্রেমওয়ার্ক প্রতিষ্ঠার জন্য যৌথভাবে বাংলাদেশের মধ্যে সহযোগিতা জোরদারের মাধ্যমে বাংলাদেশের শিল্পের মানোন্নয়নের সম্ভাবনা অন্বেষণ করার জন্য একটি এমওসি।
২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) অবস্থান থেকে উত্তরণ লাভের জন্য এবং “ভিশন ২০৪১” এর সাথে সঙ্গতি রেখে ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশ হওয়ার চলমান প্রচেষ্টার জন্য বাণিজ্য কর্মক্ষমতা এবং পণ্য বৈচিত্র্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকারী ও বেসরকারী উভয় পর্যায়ে জাপান ও বাংলাদেশের মধ্যে সহযোগিতা জোরদার।
চতুর্থ চুক্তিটি হলো- প্রতিরক্ষা সংলাপ, সফর বিনিময়, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, কোর্স, সেমিনার, কর্মশালা, প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং এর সাথে প্রাসঙ্গিক অন্য কোনো সম্মত কার্যক্রমের ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করার জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এবং জাপান সরকারের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা সংক্রান্ত স্মারক।
পঞ্চম চুক্তিটি হলো- মেট্রো রেলের ক্ষেত্রে সহযোগিতা, মেট্রো রেল নীতি, আইন ও প্রবিধান বিষয়ে সহযোগিতা, অবকাঠামো, রোলিং স্টক ও সিস্টেমের জন্য প্রযুক্তি; নিরাপত্তা নীতি ও ব্যবস্থাপনা এবং দুর্যোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে জাপানের ভূমি, অবকাঠামো, পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সহযোগিতা স্মারক।
ষষ্ঠ চুক্তিটি হলো- জাপানের ভূমি, অবকাঠামো, পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশের শিল্প মন্ত্রণালয়ের মধ্যে জাহাজ রিসাইক্লিংয়ের ক্ষেত্রে সহযোগিতা স্মারক। বাংলাদেশী পক্ষ ২০২৩ সালের মধ্যে জাহাজের নিরাপদ ও পরিবেশসম্মতভাবে রিসাইক্লিং করার জন্য হংকং ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন (এইচকেসি) মেনে চলার জন্য প্রয়োজনীয় সক্ষমতা অর্জনে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাবে।
জাপানি পক্ষ জাহাজ রিসাইক্লিং করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উন্নয়নে সহায়তা প্রদানের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাবে। এগুলোর মধ্যে একটি ট্রিটমেন্ট, স্টোরেজ এবং ডিসপোজাল সুবিধা প্রতিষ্ঠা করা এবং এইচকেসি এর বিধানগুলোর শর্ত পূরণে বাংলাদেশকে সহায়তা করা।
তথ্য বিনিময় ও চর্চা, আইপিআরের গুরুত্ব সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি, শিল্পের বিকাশ ও উদ্ভাবনের জন্য আইপিআর সিস্টেমের উন্নতির মাধ্যমে মেধাসম্পদ অধিকার (আইপিআর) সিস্টেম ও চর্চার বিষয়ে জাপান পেটেন্ট অফিস এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের পেটেন্ট, ডিজাইন এবং ট্রেডমার্ক বিভাগের মধ্যে সপ্তম সহযোগিতা স্মারকটি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
অষ্টম চুক্তিটি হলো- বাংলাদেশের আইসিটি বিভাগ, ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সাইবার নিরাপত্তাসহ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এমওসি।
কৃষিমন্ত্রী ড. মুহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডেও চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব) আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনীম, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকের-উজ-জামান, সড়ক পরিবহন ও জনপথ বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরী, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব জাকিয়া সুলতানা এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বাংলাদেশের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
চুক্তি স্বাক্ষরের আগে অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও জাপানের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
নিরাপত্তা সহযোগিতা, বিনিয়োগ, বর্ধিত বাণিজ্য সম্পর্ক, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সহযোগিতা এবং রোহিঙ্গা ইস্যুসহ সংশ্লিষ্ট পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো আলোচনায় প্রাধান্য পায়।