সাকিবকে নিয়ে ‘কিংস পার্টি’ খোলার কথা ছিল: মেজর অব. হাফিজ
সাকিবকে নিয়ে ‘কিংস পার্টি’ খোলার কথা ছিল বলে জানিয়েছনে মেজর (অব) মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীরবিক্রম।
মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর বনানীতে নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বিএনপির সিনিয়র এ নেতা।
সম্প্রতি বেটিং সাইটের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি, জুয়াড়ির প্রস্তাব গোপন রেখে আইসিসির নিষেধাজ্ঞা, জাতীয় দলের খেলা চলাকালে বিজ্ঞাপনের কাজে অংশ নেয়া, নির্বাচনি প্রস্তাবনায় সমর্থককে থাপ্পড় মারা এবং খুনের মামলার পলাতক আসামির ব্যবসা প্রতিষ্ঠান উদ্বোধন করে বিভিন্ন সময় সাকিব এসেছেন আলোচনা ও সমালোচনায়।
তবে সাকিব সবকিছুকেই এড়িয়ে গেলেও সমালোচকরা তার নৈতিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
এদিকে আওয়ামী লীগের টিকিটে সংসদ সদস্য হওয়ার আগে তিনি বিভিন্ন দলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন রাজনীতিতে সক্রিয় হতে।
রাজনীতিতে আলোচনায় এবার কিংস পার্টির সাকিব ইস্যু। সম্প্রতি বিএনপি নেতা মেজর (অব) হাফিজের হাত ধরে নির্বাচনের আগে বিএনএমে যোগ দিতে চেয়েছিলেন সাকিব। এ নিয়ে একটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর এ নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা ও সমালোচনা।
তবে মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীরবিক্রম বললেন, বিএনএম সাধারণ সম্পাদকের কথা রাখতেই ক্রিকেটার সাকিবের হাতে ফরম তুলে দিয়েছিলেন। সকালে নিজ বাসায় সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, সরকার নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে ৬ মাস আগের ঘটনার উসকানি দিচ্ছে।
তবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের মতে, কোনো দলে আনুষ্ঠানিক সদস্য না হলে প্রাথমিক সদস্য নিয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দিতে পারেন যে কেউ। সাকিব সেই নিয়ম মেনেই দলে এসেছেন।
এদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বিএনএম সৃষ্টির পেছনে নির্বাচনের আগে আওয়মী লীগ এবং সরকারের মন্ত্রীদের বিভিন্ন মন্তব্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। অনেকে বলছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচনের আগে বলেছিলেন শত ফুল ফুটবে। পাশাপাশি বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদও বলেছিলেন, মেজর হাফিজের নেতৃত্বে নতুন দল আসবে।
যদিও পরবর্তী সময়ে সংবাদ সম্মেলন করে নতুন দল গঠনের বিষয়টি সরকারের ষড়যন্ত্রমূলক প্রচারণা বলে জানিয়েছিলেন।
সাকিবের সঙ্গে ছবি প্রকাশ, যা বলছেন হাফিজ
ক্রিকেট তারকা ও সংসদ সদস্য সাকিব আল হাসান ইস্যুতে মাধুরি মিশিয়ে সংবাদ প্রকাশ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন। এর মাধ্যমে তার ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে বলেও মনে করেন তিনি।
হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘সাকিব আল হাসান এবং আমার একটি ছবি চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। অনেকে এটি নিয়ে মনের মাধুরি মিশিয়ে সংবাদ প্রকাশ করছেন। এতে আমার ভাবমূর্তি নষ্ট করার অপচেষ্টা লক্ষ্য করছি। আর দলের নেতাকর্মীরাও এতে বিচলিত হচ্ছেন।’
বিএনপির এ ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, নির্বাচনের আগে আমি দল ত্যাগ করবো এই ধরণের প্রচারণার পর অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারা সাকিবকে আমার কাছে নিয়ে আসেন। এটি নির্বাচনের প্রতিপক্ষকে জাগিয়ে তোলার অপচেষ্টা ছিল মাত্র। আমাকে অ্যাপ্রোচ করা হয়েছিল কিন্তু আমি গ্রহণ করিনি। আমি যোগদান না করায় আমার উৎসাহ না পেয়ে সাকিব তার পথ বেছে নেন।
হাফিজের মতে, এটি গোপন করার মতো কোনো বিষয় নয়। নির্বাচনের আগে সামরিক বাহিনীর কয়েকজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমার কাছে আসেন নতুন একটি দল খোলার জন্য। তারা হয়তো ভেবেছিলেন আমি বিএনপি ত্যাগ করতে পারি। কারণ বিএনপির সঙ্গে মাঝে মাঝে আমার দ্বিমত থাকে। কিন্তু এ ধরনের কোনো বিষয় নেই। আমি বিএনপির সঙ্গেই আছি। আমি বিএনএমে যোগ দেইনি’, যোগ করেন তিনি।
কিন্তু সাকিবের হাতে বিএনএমে যোগ দেয়ার ফরম তুলে দিয়েছেন বলে যে ছবিটি পত্রিকায় প্রকাশ হয়েছে, এ বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে বিএনপির এ ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, বিএনএমের সাধারণ সম্পাদক সাকিবকে আমার কাছে এনেছিলেন সাকিবকে আশ্বস্ত করার জন্য যে মেজর হাফিজ থাকছেন। কিন্তু তাকে তো আশ্বস্ত করিনি আমি। তাই তিনি তার পথ বেছে নিয়েছেন।
তিনি আরও দাবি করেন, ‘নির্বাচনের সময় সরকারের পক্ষ থেকে যারা যোগাযোগ করেছেন, তাদের বলেছি ৩২ বছর পর আমার পক্ষে দল ত্যাগ করা সম্ভব নয়। আমি ৩২ বছর ধরে বিএনপির সঙ্গে রয়েছি। আমার পক্ষে দল ত্যাগ করা সম্ভব নয়। গুজব ছড়িয়ে পরার পর নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্ত তৈরি হয়েছিল। অনেকে আমার কাছে ফোন দিয়েছিলেন। কিন্তু আমি এই বিএনপি ছেড়ে কোথাও যাবো না বলে জানিয়েছিলাম’।
তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, ‘দেশে লুটপাট হচ্ছে, তা নিয়ে কোনো রিপোর্ট দেখছি না! তবে আমার ধারণা, সরকারের অপকর্ম ঢাকতে আমার বিরুদ্ধে এই ধরনের রিপোর্ট করানো হচ্ছে। এই ধরনের রিপোর্ট আমার জন্য মানহানিকর।’
সাকিব ও কিংস পার্টি নিয়ে যা বললেন ওবায়দুল কাদের
এদিকে কিংস পার্টিখ্যাত বিএনএমের মাধ্যমে বিএনপি ভাঙার অভিযোগকে উড়িয়ে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। পাশাপাশি সাকিবের বিএনএমে যোগ দেয়ার বিষয়েও তিনি কিছু জানতেন না বলে জানিয়েছেন তিনি।
ওবায়দুল কাদের দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমি বিষয়টা গণমাধ্যমে দেখেছি। এ সম্পর্কে আমার কিছু জানা ছিল না। এখন তিনি আওয়ামী লীগের টিকিটে জয়লাভ করেছেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, এখন সাকিব আওয়ামী লীগের টিকিটে জয়লাভ করেছেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন চাওয়ার সময়ই তিনি দলের প্রাথমিক সদস্য হন। তার আগে দলের কেউ ছিলেন না। এর আগের বিষয়টি আমাদের জানা নেই।
তিনি আরও বলেন, সরকারি দল কিংস পার্টি করতে যাবে কেন? নির্বাচন সামনে রেখে অনেক রাজনৈতিক দলের ফুল ফোটে। কোনটা কিংস পার্টি, কোনটা প্রজা পার্টি, সেটা তো আমাদের জানা নেই। স্বাধীন নির্বাচন কমিশন; কাকে নিবন্ধন দেবে, সেটা তাদের ব্যাপার। নির্বাচনের আগে ফুল ফুটেছিল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম)। তাদের নিবন্ধন দিয়েছে ইসি, সেটা ইসিকে জিজ্ঞাসা করুন। এখানে তো আওয়ামী লীগের কোনো প্রকার সহায়তা, অনুরোধ ছিল না বা ভীতিও দেখানো হয়নি।
এ সময় বিএনপিকে ভাঙা হচ্ছে মঈন খানের এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, বিএনপিকে আমরা ভাঙতে যাব কেন? আমাদের কী কোনো দুর্বলতা আছে যে, বিএনপি থেকে লোক এনে পূরণ করতে হবে। আওয়ামী লীগে তো কোনো দুর্ভিক্ষ নেই। এখানেই তো অনেক লোক রয়েছেন।