দেশে বিনিয়োগ পরিবেশের সার্বিক পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে : সালমান এফ রহমান

শেয়ার করুন

প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেছেন, দেশে ব্যবসায়ীদের নিয়ে করা জরিপে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ব্যবসা পরিবেশ সূচক বা বিজনেস ক্লাইমেট ইনডেক্সে (বিবিএক্স) কিছুটা অবনমন হলেও বিনিয়োগ পরিবেশের সার্বিক পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। এর পক্ষে যুক্তি হিসেবে তিনি বাংলাদেশে কার্যরত ৬২ শতাংশ জাপানী কোম্পানি ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে আগ্রহী বলে উল্লেখ করেন। তাদের এই আগ্রহ প্রমাণ করে এখানে বিনিয়োগ পরিবেশ ভাল রয়েছে।

তিনি বলেন,বিনিয়োগ অনুকূল পরিবেশের উন্নতির ক্ষেত্রে দূর্বলতা এখনও রয়ে গেছে, তা কাটিয়ে উঠতে সরকার কাজ করছে। সরকার চায় বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নতির মাধ্যমে দেশী-বিদেশি বাড়াতে।

বৃহস্পতিবার মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) গুলশান কার্যালয়ে বিবিএক্স জরিপের প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

এ নিয়ে তৃতীয়বার বিবিএক্স জরিপ করেছে এমসিসিআই ও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ। জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ ড. মাশরুর রিয়াজ।

এবার দেশের ব্যবসা পরিবেশ সূচকে অর্জিত পয়েন্ট ৫৮ দশমিক ৭৫; ২০২২-২৩ অর্থবছরে যা ছিল ৬১ দশমিক ৯৫ পয়েন্ট। কৃষি ও বনায়ন, নির্মাণ, ইলেকট্রনিকস ও হালকা প্রকৌশল, আর্থিক মধ্যস্থতাকারী, খাদ্য ও পানীয়, চামড়া ও ট্যানারি, ওষুধ ও রাসায়নিক, আবাসন, তৈরি পোশাক, বস্ত্র, পরিবহন, খুচরা ও পাইকারি ব্যবসা মোট এই ১২টি খাতের ওপর জরিপটি করা হয়েছে।
ব্যবসায় পরিবেশের উন্নতির ক্ষেত্রে কয়েকটি চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে সালমান এফ রহমান বলেন, ব্যবসায় পরিবেশ সূচকের উন্নতির ক্ষেত্রে বড় সমস্যা ট্যাক্সেশন। দেশে যারা কর দিচ্ছে, তাদের উপর আরও কর বাড়ানো হচ্ছে।এই মানসিতকা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।

তিনি বলেন, করহার হ্রাস এবং করনেট সম্প্রসারণ এই নীতি গ্রহণ জরুরি হয়ে পড়েছে।এ ধরনের নীতি গ্রহণ করা গেলে আপনাআপনি কর ব্যবস্থা অটোমেশন এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার হয়ে যাবে।

তিনি আরও বলেন, ৯৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের জিডিপি ৪৬০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে গেছে। কিন্তু কর-জিডিপির অনুপাত বাড়ানো যায়নি। বরং এবছর এটা কমেছে। এই সমস্যা যদি আমরা ঠিক করতে পারি, তাহলে অন্য চ্যালেঞ্জসমূহ সহজে উত্তোরণ করা যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

উপদেষ্টা বলেন, পুরো দেশজুড়ে দৃশ্যমান অবকাঠামো উন্নয়ন হলেও ব্যবসা সহজীকরণকেন্দ্রিক অবকাঠামো এখনও দৃশ্যমান হয়নি। ব্যবসা সহজ করে-এমন অবকাঠামোর আরও প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন।

সালমান এফ রহমান মনে করেন ইউক্রেণ যুদ্ধ, ফেডের সুদহার বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিকবাজারে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে চাপ তৈরি করেছে। ফেডারেল রিজার্ভ সুদহার বাড়ানোয় আমাদের টাকা অবমূল্যয়িত হয়েছে এবং ডলার স্বল্পতা তৈরি করেছে।তিনি বলেন,মূল্যস্ফীতি নিংন্ত্রণে সুদহার বাড়ানো হয়েছে এবং তারল্য কমানো হচ্ছে। এতে আমরা আশা করছি জুলাই থেকে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে। পুঁজিবাজারকে শক্তিশালী করতে সরকার কাজ করছে বলে তিনি জানান।

বিবিএক্স জরিপের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা বলেন, বিশ^ব্যাংকের ব্যবসায় সূচক তৈরি হতো মাত্র ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকায় জরিপের মাধ্যমে কিন্তু বিবিএক্স তৈরি হচ্ছে দেশব্যাপী জরিপের মাধ্যমে। তাই বিশ^ব্যাংকের তুলনায় এই ইনডেক্সের পরিসংখ্যাণ ব্যাপকভিত্তিক।

উল্লেখ্য, বিশ্বব্যাংক গত ২০২০ সালে ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’ বা সহজে ব্যবসা সূচক প্রতিবেদন প্রকাশ বন্ধ করে দেয়। এরপর এমসিসিআই ও পলিসি এক্সচেঞ্জ যৌথভাবে বাংলাদেশে ব্যবসায় পরিবেশের সূচক প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. লোকমান হোসেন মিয়া জানান, আগামীবছর থেকে বিনিয়োগ সংক্রান্ত সকল সেবা অনলাইনে পাওয়া যাবে। তিনি বিবিএক্স জরিপের তথ্য-উপাত্ত বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নতির জন্য কাজে লাগানো হবে বলে জানান।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এমসিসিআইয়ের সভাপতি কামরান টি রহমান। তিনি বলেন, দেশের সামগ্রিক ব্যবসায়িক পরিবেশ সম্পর্কে বোঝার জন্য এই জরিপ করা হয়েছে। কোন খাতে কেমন নীতি গ্রহণ করা দরকার, সে বিষয়ে ধারণা দিতে এই জরিপ।নীতিপ্রণেতাদের সঙ্গে বিনিয়োগকারীরাও বুঝতে পারবেন, তাঁদের কোন পথে চলতে হবে।

ব্যবসা শুরু, জমির প্রাপ্যতা, আইনকানুনের তথ্য প্রাপ্তি, অবকাঠামো সুবিধা, শ্রম নিয়ন্ত্রণ, বিরোধ নিষ্পত্তি, বাণিজ্য সহজীকরণ, কর পরিশোধ, প্রযুক্তি গ্রহণ, ঋণের প্রাপ্যতা এবং পরিবেশগত নিয়ন্ত্রণ ও মান- এই ১১ সূচকের ওপর ভিত্তি করে জরিপটি করা হয়েছে। পরিবেশগত নিয়ন্ত্রণ ও মান সূচকটি এবার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে ড. মাশরুর রিয়াজ ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য ঋণ প্রাপ্তি বড় সমস্যা বলে উল্লেখ করেন। এছাড়া তিনি ব্যবসায় পরিবেশ সূচকের উন্নতির জন্য বেশ কিছু সংস্কার বাস্তবায়নের উপর জোর দেন।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে এমসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার নিহাদ কবীর, ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির (ফিকি) সভাপতি জাভেদ আখতার, জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশনের (জেট্রো) কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ ইউ জি আনন্দ প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।


শেয়ার করুন

Similar Posts