দ্রুত সংস্কার শেষ করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে: মির্জা ফখরুল

শেয়ার করুন

জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামীলীগ দেশে যে জঞ্জাল সৃষ্টি করেছে তা পরিষ্কার করে দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। এই মুহূর্তে মানুষের আকাঙ্ক্ষা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারকে আমরা দায়িত্ব দিয়েছি, সংস্কার কাজ দ্রুত শেষ করে, সব দলের সঙ্গে কথা বলে, সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা আশা করবো তারা অতিদ্রুত সংস্কার শেষ করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে। ভারতকে আমরা বলেছি যে গণহত্যা করেছে তাকে জায়গা দেবেন না, তারা এখনও কথা শোনেনি। তাই অন্তর্বর্তী সরকারকে বলছি, ভারতকে চিঠি দিতে, যাতে তারা শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠায়।

শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিকালে গাজীপুর জেলা ও মহানগর শ্রমিক দলের উদ্যোগে কোনাবাড়ী ডিগ্রি কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত শ্রমিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেছেন। জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের কার্যকরী সভাপতি সালাউদ্দিন সরকারের সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় নেতা হুমায়ুন কবির খানের পরিচালনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন শ্রমিক নেতা নজরুল ইসলাম খান, বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ও প্রখ্যাত চিকিৎসক ডাঃ এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, শ্রমিক দল সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন, জেলা বিএনপি সভাপতি এ কে এম ফজলুল হক মিলন, গাজীপুর মহানগর বিএনপি সভাপতি শওকত হোসেন সরকার, জেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ রিয়াজুল হান্নান, মহানগর বিএনপি সাধারণ সম্পাদক এম মঞ্জুরুল করিম রনি বক্তব্য রাখেন। এ সময় কেন্দ্রীয় নেতা হাসান উদ্দিন সরকার, মিনার উদ্দিন, ফয়সাল আহম্মেদ সরকারসহ জেলা ও মহানগর নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

সমাবেশে মির্জা ফখরুল আরো বলেন, শেখ হাসিনা শ্রমিকদের হত্যা করেছে, ছাত্রদের হত্যা করেছে। পুলিশ বাহিনীকে ব্যবহার করে দেশে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। ক্ষমতায় থাকার জন্য শেখ হাসিনা দেশের সব রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। বিশেষ করে পুলিশবাহিনীকে ব্যবহার করেছে। তাকে দিয়ে গুলি করে, মিথ্যা মামলা দিয়ে, জেলে নিয়ে নির্যাতন করে, অকথ্য অত্যাচার করে দেশকে ভীতির রাজ্যে পরিণত করেছিল। ছাত্র, শ্রমিক জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা যখন পালিয়ে গেছে তখন এদেশের মানুষ হাফ ছেড়ে বাঁচছে। শেখ হাসিনা পালালেও তার প্রেতাত্মারা এখনও এদেশে আছে। তারা চুরি, চামারি করে যে সাম্রাজ্য গড়েছিল, দেশের বাইরে সম্পদ পাচার করে সম্পদ তৈরি করেছে, এজন্য তারা তাকে ভুলতে পারে না। তারাই দেশে বিভিন্ন ভাবে ষড়যন্ত্র করছে। বড় ষড়যন্ত্র হয়েছে এই শিল্প এলাকাতে।
তারা ভাবে আবার শেখ হাসিনা ফিরে এলে, আবার তারা লুটপাট করতে পারবে। ছাত্র-শ্রমিক হত্যা করা শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে ভারত ভালো কিছু করেনি।

এখানে পোশাক শিল্পে ৫০ লাখের বেশি মানুষ কাজ করে। এই শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হলে কী দেশের অর্থনীতি ঠিক থাকে? বাইরের শক্তির সহায়তায় তারা শিল্প এলাকায় অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাচ্ছে।

শিল্প ও কারখানা রক্ষায় টাস্কফোর্স গঠনের ওপর জোর দিয়ে মির্জা ফখরুল আরো বলেন, ২০২৩ সালে রফতানির ৮৫ ভাগ এসেছে পোশাকখাত থেকে। ৫০ লাখ ১৭ জার ৬৫২ শ্রমিক কাজ করে গার্মেন্টস সেক্টরে। আমাদের গার্মেন্টস সেক্টরকে পুনরুদ্ধার করতে হবে।

এ সময় সব রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশ রক্ষায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের চোখ-কান খোলা রেখে স্বাধীনতাকে রক্ষা করতে হবে। সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোকে আহ্বান জানাচ্ছি একসঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে যেন দেশ গড়ে তুলতে পারি। এসময় শিল্প কারখানায় যাতে কোনো প্রকার অসন্তোষ তৈরি না হয় সেজন্য বিএনপি নেতাকর্মীদের পাহারা দেয়ার পাশাপাশি‌ সরকার মালিক শ্রমিকদের সাথে বসে সংকট নিরসনের দাবি জানান তিনি।
গার্মেন্টস, ঔষধ কারখানাসহ বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধ, শিল্পাঞ্চলে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা ও শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন নিয়মিত পরিশোধের দাবিতে বিশাল এই শ্রমিক জনসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বিকেলে অনুষ্ঠিত শ্রমিক সমাবেশকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই গাজীপুরের বিভিন্ন শিল্প এলাকা ছাড়াও আশুলিয়া, সাভার সহ আশপাশের এলাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকেরা খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশে যোগ দিতে থাকেন। বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ব্যানার, ফেস্টুন ও প্লে কার্ড সহযোগে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে সমাগমে দুপুরের আগেই কলেজ মাঠে লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়।


শেয়ার করুন

Similar Posts