প্রতিরক্ষা শক্তিশালী না হলে পররাষ্ট্রনীতি কার্যকর সম্ভব নয়: সেনাপ্রধান

সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, একটি শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়া কোনো দেশ কার্যকর পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়ন করতে পারে না। ইতিহাস আমাদের এই শিক্ষা দেয়। তাই আপনাদের গবেষণা করা উচিত এবং সরকারকে পরামর্শ দেওয়া উচিত, যাতে আমরা সামগ্রিকভাবে জাতি হিসাবে উন্নত হতে পারি এবং প্রতিরক্ষা, জলসম্পদ ও নিরাপত্তাসহ সবক্ষেত্রে সমৃদ্ধি অর্জন করতে পারি।
রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে এক অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। ওই অনুষ্ঠানে ‘ফাউন্ডেশন ফর স্ট্যাটেজিক অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ’ (এফএসডিএস) নামে গবেষণাধর্মী নতুন একটি ইন্সটিটিউটের আত্মপ্রকাশ হয়। প্রতিষ্ঠানটি সুশাসন, জাতীয় নিরাপত্তা, উন্নয়ন এবং পলিসি কর্মকৌশল নির্ধারণ প্রক্রিয়ায় ‘থিংক ট্যাংক’ হিসাবে গবেষণা কাজ করবে।
অনুষ্ঠানে বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল হাসান মাহমুদ খান ও নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান উপস্থিত ছিলেন। বক্তব্য দেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, আইনজ্ঞ অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন খান ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান প্রমুখ। অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রতিষ্ঠানটির উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য তুলে ধরেন ‘ফাউন্ডেশন ফর স্ট্যাটেজিক অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ’ এর চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবর।
অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান আরও বলেন, গত কয়েক দশকে বাংলাদেশ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। তবে, আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথে জাতীয় সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও উন্নয়নকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি, সঠিক গবেষণাভিত্তিক নীতিমালা প্রণয়ন সুশাসন, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও জাতীয় স্থিতিশীলতার জন্য অপরিহার্য। সুতরাং, আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই যে, এফএসডিএস তার কার্যক্রমের মাধ্যমে গবেষণা, কৌশলগত বিশ্লেষণ এবং নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। আমরা এ কাজে সর্বাত্মক সহায়তা প্রদান করব যাতে এটি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গঠনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের নিরাপদ যোগাযোগব্যবস্থা থাকা অত্যন্ত জরুরি। যদি কার্যকর যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকে, তাহলে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাবে, যা আমাদের অর্থনীতিকে ধ্বংস করবে। এজন্য প্রতিরক্ষা খাতকে শক্তিশালী করা না গেলে আমাদের পররাষ্ট্রনীতি কার্যকর করা সম্ভব হবে না।
জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান আশা প্রকাশ করে বলেন, এফএসডিএস বাংলাদেশের সর্বোত্তম স্বার্থকে সুরক্ষিত করবে। একই সঙ্গে, আমি সরকার, শিক্ষাবিদ এবং বেসরকারি খাতের সব অংশীদারকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানাই, যাতে আমাদের জাতির বৃহত্তর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা যায়।
ভূ-রাজনৈতিক বিবেচনায় বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে জানিয়ে সাবেক সেনাপ্রধান লে. জে. (অব.) এম নুরুদ্দিন খান বলেন, প্রতিবেশী দেশ ভারত সম্পর্কেও আমাদের চিন্তা করতে হবে। ভারত আজ এমন এক অবস্থানে রয়েছে, যেখানে তাদের বাণিজ্যিক মন্দা চলছে, তাদের বাজার সংকুচিত হচ্ছে এবং একদিন তারা আমাদের দিকেই ফিরে আসতে বাধ্য হবে। আমি এতে কোনো সন্দেহ দেখি না। আমাদের নীতির প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে। তিনি বলেন, এদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ, বিশেষ করে তেল ও গ্যাস, আমাদের কৌশলগত গুরুত্বকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। চীন, আমেরিকা এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলো আমাদের ওপর আগ্রহী। আমরা তাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখছি এবং এটি আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন-সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) শফিউদ্দিন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ, সাবেক আইজিপি আশরাফুল হুদা, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিশেষ সহকারী (সিনিয়র সচিব পদমর্যাদা) মনির হায়দার, ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম, প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, মানবজমিনের সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, দেশ রূপান্তরের সম্পাদক কামাল উদ্দিন সবুজ, একুশে টেলিভিশনের চেয়ারম্যান আবদুস সালাম, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ডক্টর মাহাদী আমিন, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, এনডিএমের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, বিএনপি চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এবিএম আব্দুস সাত্তার, বিএনপি মিডিয়া সেল আহ্বায়ক মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল প্রমুখ।