আইএমএফের দৃষ্টিতে রাজস্ব আদায় নিয়ে উদ্বেগ: অর্থ উপদেষ্টা

শেয়ার করুন

বাংলাদেশের অর্থনীতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দৃষ্টিতে স্থিতিশীল এবং সঠিক পথে রয়েছে বলে জানিয়েছে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। অন্যদিকে রাজস্ব আদায়ের হার, খেলাপি ঋণ আদায় এবং একক বিনিময় হার বাস্তবায়ন নিয়ে সংস্থাটির প্রতিনিধদল উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

রোববার (৬ এপ্রিল) নিজ কার্যালয়ে আইএমএফের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। আইএমএফের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন মিশন প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও।

আইএমএফ সঙ্গে চলমান আলোচনা প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি আইএমএফের দৃষ্টিতে স্থিতিশীল এবং সঠিক পথে রয়েছে। তবে সংস্থাটি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা, বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখা এবং বাজেট ঘাটতি কমানোর বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছে।

তিনি বলেন, রাজস্ব সংগ্রহ, খেলাপি ঋণ আদায় এবং বিনিময় হার বাজারে ছেড়ে দেওয়ার মতো নানা ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ‘গুড ইনটেনশন’ বা সদিচ্ছার প্রমাণ দিয়েছে। এখন আইএমএফ কী করে, সেটাই দেখার বিষয়।

সংস্থাটির উদ্বেগ প্রকাশের বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বৈঠকে আইএমএফ বাংলাদেশের রাজস্ব আদায়ের হার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা বলছে, দেশে লাখ লাখ মানুষ আয়কর রিটার্ন দিচ্ছে শূন্য দেখিয়ে। বর্তমানে বাংলাদেশের ট্যাক্স-জিডিপি অনুপাত মাত্র ৭ দশমিক ৫ শতাংশ, যেখানে নেপালের ১২ থেকে ১৩ শতাংশ এবং ভারতের ১৭ থেকে ১৮ শতাংশ। এই বাস্তবতা ব্যাখ্যা করে আইএমএফকে জানানো হয়েছে, এই পরিস্থিতির উন্নয়নে সরকার কাজ করছে। এছাড়া খেলাপি ঋণ আদায় এবং একক বিনিময় হার বাস্তবায়ন নিয়েও সংস্থাটির উদ্বেগ রয়েছে বলে জানান তিনি।

আইএমএফের ঋণের পরের কিস্তি বিষয়ে কোনো কথা হয়েছে কি না জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের গুড ইনটেনশন তাদেরকে দেখিয়েছি। এখন আইএমএফ দেখাক। তবে আমরা আশাবাদী জুনে পরবর্তী কিস্তির ছাড় হবে। এর আগে এসব বিষয় নিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আইএমএফের পৃথক আলোচনা হবে। এরপর আগামী ১৯ এপ্রিল তিনি ওয়াশিংটনে আইএমএফের বসন্ত সভায় অংশ নেবে, যেখানে এসব বিষয় আরও বিস্তারিতভাবে আলোচিত হবে।

বৈঠকে আইএমফের প্রতিনিধিদলের জানতে চাওয়া নিয়ে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘শুল্ক-কর নিয়ে আইএমএফ জানতে চেয়েছে, কর-জিডিপি অনুপাত বাড়াব কীভাবে? কর আদায় বাড়াব কীভাবে? এ ছাড়া করনীতি ও কর আদায়- এ দুটি বিভাগ আলাদা করার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। সার্বিকভাবে বাজেট ঘাটতি কীভাবে মোকাবিলা করা হবে, সে বিষয়েও আইএমএফ জানতে চেয়েছে। এছাড়া কাঙ্ক্ষিত হারে রাজস্ব আদায় না হওয়া প্রসঙ্গে আইএমএফ বলেছে, বাংলাদেশে কর জাল অনেক কম। এখানে লাখ লাখ শূন্য রিটার্ন দিয়ে থাকে। ভ্যাটের একক হার দেখতে চায় আইএমএফ। কিন্তু আমরা একেবারে একক ভ্যাট হারে যেতে পারব না।’

প্রতিনিধিদলের পরামর্শের বিষয়ে বলেন, দুই কিস্তির অর্থ ছাড়ে আইএমএফের এবারের মিশন রাজস্ব পরিস্থিতি, কর- জিডিপি অনুপাত, বিদেশি মুদ্রার মজুত, বাজেট ঘাটতি এসব বিষয় পর্যালোচনা করা। এ ছাড়া রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির পাশাপাশি ব্যাংক খাতের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার পরামর্শ দিয়েছেন প্রতিনিধিদলের সদস্যরা এবং আইএমএফের মতে সংস্কারের বিষয়ে বাংলাদেশ ভালো মনোভাব দেখিয়েছে।


শেয়ার করুন

Similar Posts