গাজীপুরের টঙ্গীর মসজিদের খতিব অপহরণ হয়নি দাবি পুলিশের

শেয়ার করুন

গাজীপুরের টঙ্গীর টিএন্ডটি বাজার জামে মসজিদের খতিব মোহাম্মদ মোহেববুল্লাহ মিয়াজী অপহরণ হয়েছিলেন বলে দাবি করা হলেও পুলিশ বলছে ভিন্ন কথা। ওই খতিবের অপহরণ ও উদ্ধার বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে জিএমপি গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি)।
মঙ্গলবার সকালে জিএমপি হেডকোয়ার্টারে সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে তথ্য তুলে ধরেন জিএমপি ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ তাহেরুল হক চৌহান। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপ পুলিশ কমিশনার মোঃ জাহিদ হোসন ভূঁইয়া, মোঃ মহিউদ্দিন আহমেদ ও এস এম শফিকুল ইসলাম।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, টঙ্গী পূর্ব থানাধীন মরকুন টিএন্ডটি বাজার জামে মসজিদের খতিব মোহাম্মদ মোহেববুল্লাহ মিয়াজি অপহৃত হয়েছেন দাবি করে গত ২৪ অক্টোবর টঙ্গী পূর্ব থানায় এজাহার দায়ের করলে( মামলা নং-৫৪, (তারিখ-২৪/১০/২০২৫ খ্রিঃ, ধারা-৩২৩/৩৪১/২৯৫/২/৩৬৪/৩৭৯/৩০৭/৫০৬/৩৪ পেনাল কোড) তা থানায় রেকর্ড করা হয়।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ২২অক্টোবর সকাল ০৭ টায় মামলার বাদী টিএন্ডটি বাজার জামে মসজিদের খতিব মোহাম্মদ মোহেববুল্লাহ মিয়াজি (৬০) মর্নিং ওয়াকে বের হলে বাসার অদূরে টঙ্গী পূর্ব থানাধীন শিলমুন এক্সোস লিংক সিএনজি ফিলিং এন্ড কনভারশন সেন্টার এর সামনে টঙ্গী টু কালীগঞ্জগামী আঞ্চলিক সড়কের উপর একটি অ্যাম্বুলেন্স তার পথরোধ করে দাঁড়ায়। পরে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ করে অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জন ব্যক্তি জোরপূর্বক অ্যাম্বুলেন্সে উঠায়। সাথে সাথে কালো কাপড়ে চোখ বেঁধে নির্যাতন করতে থাকে এবং গাড়ি বিরতিহীন ভাবে চলতে থাকে। এভাবে থেমে থেমে তাকে শারীরিক নির্যাতন করা হয়। পঞ্চগড়ের স্থানীয় জনতা জাতীয় জরুরী সেবা ‘৯৯৯’ এ ফোন করলে পঞ্চগড় সদর থানা পুলিশ তাহাকে উদ্ধার করে পঞ্চগড় সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে টঙ্গী পূর্ব থানা পুলিশের সহায়তায় তিনি পঞ্চগড় থেকে নিজ বাসায় ফিরেন।

পুলিশ কর্মকর্তা ব্রিফিং এ জানান, মামলা দায়েরের পর মামলার তদন্তকারী টিম টঙ্গীর টিএন্ডটি কলোনীস্থ বাদীর নিজ বাসা হতে ঘটনাস্থল পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা নেন। তদন্তকালে দেখা যায় ভিকটিম তার বাসা হতে বের হয়ে একাকি হেটে নিমতলী সিএনজি পাম্প পার হয়ে পূবাইল থানাধীন মাজুখান ১৪ তলা পার হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। বাদী তার এজাহারে ৪/৫ জন ব্যক্তি কর্তৃক তাকে অ্যাম্বুলেন্স তুলে নিয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করলেও ঐ সময়ের ০৩ ঘন্টার মধ্যে কোন ধরনের অ্যাম্বুলেন্সের চলাচল সিসি ক্যামেরায় দেখা যায়নি। ২২ অক্টোবর ঢাকার বিভিন্ন অবস্থান শ্যামলী বাস কাউন্টার, বগুড়ার হোটেলে যাত্রাবিরতির সিসিটিভি ফুটেজ, বাস চালক ও সহকারীদের সাক্ষ্য, পঞ্চগড়ের গতিবিধি ইত্যাদি যাচাই বাছাই করা হয়।

তথ্য অনুযায়ী, রাত অনুমান ১১:৩০টা হতে ১২টার মধ্যে পঞ্চগড় জেলার সর্বশেষ বাস স্টেশনে নেমে তিনি সামনের দিকে হাটতে থাকেন। ওই সময় ভিকটিমের সামনে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, জেলা পুলিশ লাইন্স দৃশ্যমান হয়। তার প্রস্রাবের বেগ হলে তিনি আরও কিছু দূর এগিয়ে অন্ধকার একটি জায়গায় রাস্তার পাশে প্রসাব করিতে গেলে, প্রস্টেট গ্রন্থির রোগের কারণে তার পায়জামা ও পাঞ্জাবি ভিজে যায়। তিনি তার নিজ হাতে পায়জামা ও পাঞ্জাবি খুলে ফেলেন। কিন্তু কিছুটা ঠান্ডা অনুভব করায় এবং শরীর ক্লান্ত থাকায় অবচেতন মনের কারণে তার পক্ষে পায়জামা ও পাঞ্জাবি পরিধান সম্ভব হয়নি। এসময় রাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া সোনালী রংয়ের একটি ছোট তালা সংযুক্ত একটি শিকল তিনি পায়ে জড়িয়ে রাস্তার পাশে ঘুমিয়ে পড়েন। ঘুম থেকে জেগে তিনি নিজেকে দেখতে পান, তিনি পঞ্চগড় সদর হাসপাতালে আছেন। আশেপাশের উলামায়ে কেরামগণ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তার অবচেতন মনে তিনি বিভিন্ন ধরনের কথাবার্তা বলেন। বর্তমানে মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে। ওই ব্যক্তির বক্তব্য যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। এই ঘটনায় অন্য কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠি জড়িত রয়েছে কিনা বা কি উদ্দেশ্যে কারো প্ররোচনায় এ কাজ করেছেন কিনা, তা এখনো স্পষ্ট নয়। আরো অধিক তদন্তের মাধ্যমে পুরো বিষয়টি স্পষ্ট করে পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


শেয়ার করুন

Similar Posts