পটুয়াখালী-১ আমাকে সরাতে ১০০ কোটি টাকা নিয়ে মাঠে নেমেছে: আলতাফ হোসেন
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসতেই পটুয়াখালী-১ আসনে বিএনপি এখন চরম অস্থিরতায়। একদিকে দলের ঘোষিত প্রার্থী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, অন্যদিকে জেলা বিএনপির প্রভাবশালী নেতৃত্ব।
দুইপক্ষের এমন মুখোমুখি অবস্থানে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়েছে।
২৬ নভেম্বর বদরপুরে জনসভায় আলতাফ হোসেন চৌধুরী এক বিস্ফোরক অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, মনোনয়ন না পেয়ে কয়েকজন আমাকে সরাতে ১০০ কোটি টাকার বাজেট নিয়ে মাঠে নেমেছে। ব্যর্থ হয়ে এখন হাউকাউ করছে। তার অভিযোগের তীর স্পষ্টভাবে জেলা বিএনপির সভাপতি স্নেহাংশু সরকার কুট্টি, সম্পাদক মুজিবুর রহমান টোটন ও সাবেক মেয়র জেলা বিএনপির প্রভাবশালী সদস্য পিনুর দিকে।
তিনি আরও ঘোষণা দেন, দাওয়াত খাওয়ার জন্য কাউকে ডাকব না। নির্বাচন কে করবে, আমি ঠিক করব। দায়িত্ব পাবেন তারা, যারা আন্দোলনের ফ্রন্টলাইনে ছিলেন।
প্রার্থীর অভিযোগের প্রতিবাদে ঠিক পরের দিন জেলা বিএনপি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন নেতারা। জেলা বিএনপির নেতারা বলেন, বিভ্রান্তিকর, বাস্তববর্জিত এবং দলে বিভাজন সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মজিবুর রহমান টোটন তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, প্রার্থী মাঠের বাস্তবতা জানেন না। তার অভিযোগ কল্পনাপ্রসূত।
আলতাফ হোসেন চৌধুরীর কথা উল্লেখ করে পটুয়াখালী বিএনপির সভাপতি স্নেহাংশু সরকার কুট্টি মন্তব্য করেন, প্রার্থীর বয়স ৮৮ বছর। কখন কী বলেন তার ঠিক-ঠিকানা নেই। বয়সজনিত কারণে অনেক সময় খেই হারিয়ে ফেলেন।
সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির প্রভাবশালী নেতা ও সাবেক মেয়র মোস্তাক আহমেদ পিনুর বক্তব্যে বলেন, এখনো সিডিউল ঘোষণা হয়নি। চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে আমরা স্নেহাংশু সরকার কুট্টিকে চাই।
এ ঘোষণা দলের ঘোষিত প্রার্থীকেই সরাসরি বাতিল করার সাংগঠনিক দাবি বলে জানান বিএনপির নীতি-নির্ধারকদের প্রতি।
জেলা বিএনপির নেতাদের আরও অভিযোগ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাসভবনকেন্দ্রিক রাজনীতি করছেন, জেলা কমিটিকে সম্পূর্ণ পাশ কাটিয়ে একক সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন এবং দলীয় কাঠামো অমান্য করে একজন পদবিহীন ব্যক্তিকে প্রধান সমন্বয়কারী বানিয়েছেন। তাদের দাবি—এতে তৃণমূল ক্রমেই ক্ষুব্ধ হচ্ছে।
প্রার্থী কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল অবসরপ্রাপ্ত আলতাফ হোসেন চৌধুরী পাল্টা জবাবে আরও কড়া মন্তব্য করে বলেন, যারা জিয়া সড়ক ভেঙে মৃধা সড়ক করেছে, যারা গলাচিপায় ক্ষমা জাহাঙ্গীরের সঙ্গে কালো মুজিব কোট পরে মিছিলে ছিল, যাদের বহু দেশের পাসপোর্ট, যারা বাংলাদেশের টাকা বিদেশে পাঠায়— তারাই এখন বিএনপির নীতি-নির্ধারক। এরা ঐক্যবদ্ধ বিএনপিকে বিভক্ত করেছে, দুর্বল করেছে। এদের বিশ্বাসযোগ্যতা কতটা—আমার কথাতেই তার প্রমাণ।
তিনি আরও দাবি করেন, কেন্দ্রের নির্দেশে তাদের (পিনু, কুট্টি ও টোটন) সঙ্গে দেখা করেছি, মিলেমিশে কাজ করতে চেয়েছি—তারা মিলবে না। একজন ব্যাংকার, একজন ধনী ব্যবসায়ী ঠিকাদার, আর ভিপি নুরকে দিয়ে আমার বিরুদ্ধে নির্বাচনে দাঁড়া করানোর চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় এখন ১০০ কোটি টাকার প্ল্যান নিয়ে মাঠে নেমেছে আমাকে ঠেকাতে।
তবে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক টোটন বলেন, আলতাফ হোসেন চৌধুরী আমাদের ধানের শীষের প্রার্থী। তার বিরোধিতা করার প্রশ্নই ওঠে না। অভ্যন্তরীণ ভুল–বোঝাবুঝি আলোচনায় সমাধান হবে—আমরা একসঙ্গেই মাঠে নামব।
