নতুন নতুন অপরাধ মোকাবেলায় পুলিশ বাহিনীকে প্রস্তুতি নিতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

শেয়ার করুন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এই যুগে প্রতি নিয়ত অপরাধের ধরন পাল্টাচ্ছে। কাজেই এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে পুলিশ বাহিনীকেও সেভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে। এই জন্য সরকার তাদের পাশে রয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের (পিএমও) শাপলা হলে ‘পুলিশ সপ্তাহ-২০২৪’ উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সভায় দেওয়া ভাষণে তিনি একথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রযুক্তির উৎকর্ষতা যত বৃদ্ধি পাচ্ছে, অপরাধও কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন ভাবে হচ্ছে। নতুন নতুন মাত্রায় অপরাধ দেখা দিচ্ছে। সেইগুলো শেখ হাসিনা আরও বলেন, অপরাধের সাথে সাথে সেটাকে মোকাবিলা করার পদ্ধতিও যদি সমানতালে না চলে তাহলে কিন্তু যথাযথভাবে সেটা করা যায় না। এই জন্যই আমরা সেভাবেই চেষ্টা করে যাচ্ছি।

‘স্মার্ট পুলিশ, স্মার্ট দেশ, শান্তি প্রগতির বাংলাদেশ,’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে গত মঙ্গলবার রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে ছয় দিনব্যাপী পুলিশ সপ্তাহ-২০২৪ শুরু হয়েছে। শেখ হাসিনা এর উদ্বোধন করেন।

শিখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের পুলিশ বাহিনী এখন মানুষের বন্ধু হিসেবে কাজ করছে।’ আজকাল মানুষ আর আগের মতো পুলিশকে ভয় পায় না। এখন তারা আস্থা ফিরে পেয়েছে। পুলিশকে নিজের বন্ধু এবং আস্থার জায়গা হিসেবে সাধারণ মানুষ বিবেচনা করে। মানুষের এই বিশ্বাস এবং আস্থা অর্জন করতে হবে।

তিনি বলেন, মানুষের জন্য কাজ করে আপনারা মানুষের হৃদয়ে একটা স্থান করে নিয়েছেন। মানুষের সেই আস্থা ও বিশ্বাস সবচেয়ে বড় কথা। যে কোন কর্মস্থলেই হোক না কেন-সেখানে নারী, পুরুষ, শিশু যেই থাকুক তাদেরকে আপনজন হিসেবে বিবেচনা করেই তাদের প্রতি দায়িত্ব পালন করবেন। তাদের সেবা করবেন এটাই সকলে চায়।

নিজ নিজ কর্মস্থলে অধস্তনদের তাঁর এই নির্দেশনা জানানো এবং দেশের মানুষের পাশে থেকে তাদের সেবা করে যাওয়ার জন্য পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের প্রতি আহবান জানান তিনি ।

আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা, পুলিশকে মারা, পুলিশ হত্যাসহ সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের যে মামলাগুলো রয়েছে এর দীর্ঘসূত্রিতা থাকার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এই মামলাগুলো কিন্তু যথাযথভাবে চলে না।

তিনি বলেন, আমি মনে করি যারা এই ধরনের অপরাধ করে তাদের মামলাগুলো যদি যথাযথভাবে চলে এবং যদি দ্রুত সাজা হয়ে যায়, তাহলে আর অপরাধ করার সাহস পাবে না। সেইলক্ষ্যে আগামীতে যেন আর কেউ এইভাবে পুলিশের ওপর আক্রমণ করতে না পারে সেইভাবে পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের প্রস্তুত থাকতে বলেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঐ রাজনীতির নামে হোক আর সন্ত্রাসের নামে হোক আইনকে যাতে নিজের হাতে তুলে নিতে না পারে এবং আইন শৃংখলা ও মানুষের জানমাল এবং জাতীয় সম্পদের ক্ষতি করতে না পারে এই ব্যাপারে পুলিশকে অবিচল থাকতে হবে। যখনই যেটা দরকার যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে। আমি আপনাদের কাছে সেটাই কামনা করি।

তিনি বলেন, ‘কেউ যেন আইনকে নিজের হাতে তুলে নিতে এবং আইনশৃংখলার অবনতি ঘটাতে না পারে।’

আওয়ামী লীগ সরকারে এসে জনগণের ক্ষমতা আবার জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কাজেই জনগণের শান্তি শৃংখলা জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করাই আমাদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাই ও প্রতি মেয়াদে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা দেই এবং তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করি।

শেখ হাসিনা বলেন, যেহেতু ২০০৯ সাল থেকে টানা ক্ষমতায় থাকার ফলে দেশে গণতান্ত্রিক ধারা বিরাজমান। পাশাপাশি পরিস্থিতিও সেভাবে স্থিতিশীল রয়েছে। কাজেই আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। আমরা এখন স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি।

ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের আগ্রাসনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ফিলিস্তিনের ওপর যে হামলা এবং গণহত্যা চলছে বাংলাদেশ কিন্তু এর প্রতিবাদ জানিয়েছে। আমি প্রতিটি জায়গায় এর প্রতিবাদ করেছি। ফিলিস্তিনে নিরীহ নারী ও শিশুদের ওপর অকথ্য অত্যাচার-নির্যাতন ও গণহত্যা যে চলছে শুধু তাই নয় তাদের খাদ্য, চিকিৎসা-হাসপাতাল সবকিছুতে এমনকি যেখানে রিলিফ বিতরণ হয় সেখানেও আক্রমণ চালানো হচ্ছে। এর থেকে জঘন্য এবং মানবতা বিরোধি কাজ আর হতে পারে না। আর এর প্রভাবটা বিশ্ব অর্থনীতিতে পড়ছে এবং আমাদের ওপরও কিন্তু সেই ধাক্কা আসছে। যদিও আমাদের প্রচেষ্টা রয়েছে এটা মোকাবেলা করার।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকায় আজকে বাংলাদেশকে কেউ আর তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের চোখে দেখতে পারে না। বাংলাদেশ এখন সারাবিশ্বে নিজের একটা স্থান করে নিতে পেরেছে। এখন বাংলাদেশকে বিশ্বে উন্নয়নের মডেল হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু সেই ভাবমূর্তি ধরে রেখে আমাদের সামনের দিকে এগোতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেই জন্য আমাদের যেকোন কাজ প্রকল্প বাস্তবায়ন থেকে শুরু করে জানমালের নিরাপত্তা থেকে শুরু করে যেকোন অপরাধ সেটা মোকাবেলা এবং সাজার ব্যবস্থাকরনে যথাযথ দায়িত্ব পালন করা সকলের কর্তব্য। সেভাবেই আপনারা কাজ করে যাবেন।’
তিনি বলেন, জাতির পিতা আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গিয়েছেন। আমরা বাংলাদেশকে আরো উন্নত সমৃদ্ধ করতে চাই যেন বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলতে পারি।


শেয়ার করুন

Similar Posts