দেড়শ’ কোটি টাকার মালিক মুহিবপত্নী
পটুয়াখালী-৪ আসনের এমপি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী মহিবুর রহমান মুহিবের স্ত্রী ফাতেমা আক্তার রেখার নামে ৩০টি দলিলে রয়েছে অন্তত ৩৭ একর জমি। সব জমিই পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটা ও পায়রা বন্দরের আশপাশে। এসব জমির বর্তমান বাজারমূল্য দেড়শ’ কোটি টাকা হবে।
২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পান মুহিব। নির্বাচনে রাতের ভোটে এমপি নির্বাচিত হন। স্বামী এমপি নির্বাচিত হওয়ার পরই টাকা আর জমির নেশায় পেয়ে বসে মুহিবপত্নীকে। দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ উপায়েই এ সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি।
২০১৯ সালের ২১শে নভেম্বর তাপস সাহা গং নামে এক হিন্দু পরিবারের কাছ থেকে কোটি টাকা দিয়ে ৮শ’ শতাংশ (৮ একর) জমি কেনেন রেখা। এই জমির অবস্থান ইটবাড়িয়া মৌজায়। দলিল নং-৪৫১২। ২০২৪ সালে ধুলাসার মৌজায় আলমগীর হোসেন হাওলাদারের কাছ থেকে নেন ৫ দশমিক ২৬ একর জমি। ২০২২ সালের ২৬শে ডিসেম্বর ৬৬৭০নং দলিলে বৌলতলীতে রিয়াজুল ইসলাম মিলন তালুকদারের কাছ থেকে কেনেন ০.৬১ একর জমি। ২০১৭ সালের ৩১শে আগস্ট কাউয়ারচর মৌজায় আব্দুস সত্তার গংয়ের কাছ থেকে নেন দেড় একর, দলিল নং ৪১২০। একই সালের ৩১শে আগস্ট ১ দশমিক ৩৪ একর জমি কেনেন রেখা। যার দলিল নং ৪১১৯।
২০১৯ সালের ২৯শে সেপ্টেম্বর কাউয়ারচর মৌজায় ৩৯৬২নং দলিলে স্থানীয় দাদন মিয়ার ১ দশমিক ১২ একর জমি কেনেন মাত্র ২২ লাখ ৪৫ হাজার টাকায়। ২০১৮ সালের ১২ই এপ্রিল ধুলাসার মৌজায় মোশারেফ হাওলাদার গংয়ের কাছ থেকে নেন ১ দশমিক ২১ একর জমি। একই এলাকায় পরের বছরের ১৯শে জুন ২৫৪৬নং দলিলে দশমিক ৩৮ একর জমি কেনেন।
২০২৩ সালের ১১ই অক্টোবর ৫২১২নং দলিলে বৌলতলী মৌজায় ১ দশমিক ৩৯ একর ধানী জমি নেন স্থানীয় আবুল কাশেম গংয়ের কাছ থেকে। ২০১৯ সালের ২রা জানুয়ারি কাউয়ারচর মৌজায় আবদুল ছত্তার গংয়ের ০ দশমিক ৭৬ একর জমি লিখে নেন রেখা। যার দলিল নং-৪০১১। ২০২৩ সালের ২১শে সেপ্টেম্বর ধুলাসার মৌজায় নাজিম সিকদার গংয়ের দেড় একর জমি দলিল করে নেন মুহিবপত্নী ফাতেমা আক্তার। যার দলিল নং-৫০১৭। ২০১৯ সালের ২রা অক্টোবর কাউয়ারচরে জলিল গংয়ের ৩৯ শতাংশ জমি বাগিয়ে নেন রেখা।
২০১৮ সালের ২৩শে এপ্রিল ধুলাসার মৌজার সোনা মিয়া গং ও নুর সাঈদ গংয়ের কাছ থেকে ৪৮ লাখ টাকায় কেনেন একটি জমি। একই জায়গায় ৪০৮২নং দলিলে রয়েছে রেখার আরও ৩০ শতাংশ জমি। বৌলতলীতে ২০২২ সালের ২৬শে ডিসেম্বর স্থানীয় আজিজুর রহমানের ১০২ শতাংশ জমি মাত্র ৬ লাখ টাকায় দলিল করেন রেখা। দলিল নং-৬৬৭২।
একই সালে তিনি ফিরোজা বেগমের কাছ থেকেও সমপরিমাণ জমি দলিল করেন একই স্থানে। যার দলিল নং-৬৬৭১। ধুলাসারের আব্দুল মালেক গংয়ের ১৯০ শতাংশ, গঙ্গামতিতে ৩০ শতাংশ, ২০২০ সালে রফিকুল ইসলাম গংয়ের কাছ থেকে কেনেন ১৫৪ শতাংশ জমি। এ ছাড়া ২০১৮ সালে ০.৪৫ একর, ২০১৯ সালে ০.২০ একর, ২০১৭ সালে দেড় একর ও ০.৪২ একর জমি কেনেন রেখা।
ধুলাসার ইউনিয়নের সাবেক এক চেয়ারম্যান নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, স্কুল-কলেজের চাকরি বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্য ও টিআর কাবিখার কাজ না করে পুরো টাকা লুটপাট করে নিয়েছেন তিনি। সেই অর্থেই কুয়াকাটা ও পায়রা বন্দরের মতো জায়গায় এত জমি কিনেছেন তিনি।
ফাতেমা আক্তার রেখা আলহাজ জালাল উদ্দিন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। কলেজের অফিস সহায়ক আলমগীর হোসেন বলেন, ফাতেমা আক্তার কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ছিলেন। ২০১৮ সালে তিনি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হয়েছেন। তার বেতন সর্বসাকুল্যে ৩৮ হাজার টাকার মতো।
হিন্দু সমপ্রদায়ের কাছ থেকে দলিল করা কোটি টাকা মূল্যের আট একর জমির মালিকানা অস্বীকার করলেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী মো. মহিবুর রহমানের স্ত্রী ফাতেমা আক্তার। গত পহেলা অক্টোবর ঢাকার একটি নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে এক হলফনামায় এ জমির মালিকানা তিনি অস্বীকার করেন। হলফনামায় দাবি করেছেন,‘রেজিস্ট্রিকৃত ওই সাফ কবলা দলিল আমি ও আমার নিকটজনের অজান্তে কে বা কারা সম্পন্ন করেছে যা আমি অবগত নই। আমি বিষয়টি অবগত হয়ে আমার প্রতিনিধির মাধ্যমে বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত জেনে দলিলের কপি সংগ্রহ করি।
সে হলফনামায় আরও উল্লেখ করেছেন, আমি বা আমরা অবগত না থাকায় অত্র দলিলে আমি বা আমার নিকটজনের কোনোরূপ স্বত্ব বা মালিকানা থাকবে না। ভবিষ্যতেও দাবি করবো না। এ নিয়ে ভবিষ্যতে কোনো অসুবিধা বা বিতর্ক, বিবাদ দেখা দিলে আমি বা আমার নিকটজন দায়-দায়িত্ব বহন করবো না। এমনকি দলিলটির মূল্য ও রেজিস্ট্রি খরচ সে পরিশোধ করেননি বলে উল্লেখ করেছেন। এই হলফনামাটি অতি সম্প্রতি কলাপাড়া সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দাখিল করা হয়েছে।