কুয়াকাটার চর বিজয়ে অতিথি পাখি আর লাল কাঁকড়ার সৌন্দর্য্য দেখে মুগ্ধ পর্যটকরা

শেয়ার করুন

‘সাগরকন্যা’ খ্যাত কুয়াকাটা বাংলাদেশের দক্ষিনের অপুর্ব সুন্দর এক সমুদ্র সৈকত। এখানে একই স্থানে দাড়িয়ে সুর্যোদয় ও সুর্যাস্ত দেখা যায়। এছাড়া কুয়াকাটার বিভিন্ন দর্শনীয় স্পটের পাশাপাশি পর্যটকদের কাছে টানছে সমুদ্রের বুকে জেগে ওঠা ‘চর বিজয়’ এ অতিথি পাখি আর লাল কাঁকড়ার সৌন্দর্য।

শীতের মৌসুম আসলেই অতিথি পাখির বিচরণ আর লাল কাঁকড়ায় মুখরিত থাকে এই চরটি। এটি পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার কুয়াকাটা থেকে দণি-পূর্ব কোণে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে গভীর সাগরে জেগে ওঠা মনোমুগ্ধকর এক চর। চারদিকে অথৈ জলরাশি। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এখানে হরেক রঙের বিভিন্নি প্রকার অতিথি পাখির অবাধ বিচরণে মুখর থাকে। নীল দিগন্তের মাঝে এ এক অপরূপ সৌন্দর্যের হাতছানি। এছাড়াও এই চরটিতে রয়েছে সাদা ঝিনুকের ছড়াছড়ি। বন বিভাগের উদ্দোগে কিছু চারা গাছের রোপনে দূর থেকে ভ্রমণ পিপাসুর নজর কাড়ে দ্বীপটি।

জেলেরা স্থানীয়ভাবে এ দ্বীপটির নামকরণ করে ‘হাইরের চর’। ‘হাইর’ হলো মাছ ধরার জন্য জেলেদের নির্ধারিত সীমানা। তবে পর্যটক দলের সদস্যরা দ্বীপটির নাম দিয়েছেন ‘চর বিজয়’। ২০১৭ সালের বিজয়ের মাসে আবিষ্কার বলেই এই নাম। পরে জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে বন বিভাগ ওই চরে গোল, ছইলা, কেওড়া ও সুন্দর গাছের চারা রোপন করে। বর্তমানে অস্থায়ী বাসস্থান তৈরি করে মাছ শিকার ও শুঁটকি প্রক্রিয়াজাত করছেন জেলেরা। বর্ষাকালে পুরো দ্বীপটি সাগরের জলরাশিতে ঢাকা পড়ে যায়। শীত মৌসুমে ডেরা তৈরি করে মাছ শিকার ও শুঁটকি করার জন্য জেলেরা এখানে তিন মাস থাকেন। দ্বীপটি পূর্ব-পশ্চিমে লম্বা। দৈর্ঘ্যে প্রায় ১০ কিলোমিটার। প্রস্থে ৩ কিলোমিটার। তবে জোয়ারের সময় দৈর্ঘ্যে ৩ কিলোমিটার এবং প্রস্থে ১ কিলোমিটার ।

কুয়াকাটা ট্যুরিজমের গাইড পরিচালক কে এম বাচ্চু বলেন, কুয়াকাটা থেকে মাত্র দেড় ঘন্টায় পৌঁছানো যায় চর বিজয়ে। এটি এখন দর্শনীয় পর্যটন স্পট হয়ে গেছে। প্রতি বছর শীতের মৌসুমে আমরা হাজার হাজার পর্যটক নিয়ে যাই সেখানে। অতিথি পাখি আর লাল কাঁকড়ার বিচরণ দেখতে প্রতিনিয়ত জনপ্রিয়তা বাড়ছে এই দ্বীপটির। বর্তমানে চরের আয়তন আরও বড় হচ্ছে এবং সবুজ বনায়ন তৈরি হচ্ছে।

কুয়াকাটা ভ্রমনে আসা কুষ্টিয়ার লিজা আক্তার (৩৪) বলেন, ’আমরা দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘুরেছি কিন্তু সমুদ্রের মধ্যে এত সুন্দর একটি দৃশ্য কল্পনা করিনি। কি যে ভালো লাগছে, যেন এক অন্য ভুবন। চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবে না আমাদের দেশে এরকম একটি চর জেগে উঠছে।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কলাপাড়া জোনের সাধারণ সম্পাদক মেজবাহউদ্দিন মাননু বলেন, চর বিজয় আমাদের উপকূলের মানুষের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ। কুয়াকাটা পর্যটন নগরীতে যুক্ত হলো আরও একটি দর্শনীয় স্থান। তবে চর বিজয়ে থাকা অতিথি পাখি এবং লাল কাঁকড়ার অবাধ বিচরণ বিনষ্ট করা যাবে না। বর্তমানে অস্থায়ীভাবে জেলে পল্লী তৈরি করার চেষ্টা করছে উপকূলের জেলেরা। যা এই চর বিজয়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য হুমকি স্বরূপ।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা জোনের পরিদর্শক হাসনাইন পারভেজ বলেন, কুয়াকাটায় আগত সকল পর্যটকদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা সেবা দেয়ার জন্য সব সময় আমরা প্রস্তুত থাকি। কুয়াকাটায় বর্তমানে ১৪ টির মত দর্শনীয় স্থান রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম একটি চর বিজয়। এটি পর্যটকদের কাছে দিন দিন খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।


শেয়ার করুন

Similar Posts